ওপেনসোর্স মানে ফ্রি না – যেভাবে শিখলাম

“ওপেন সোর্স” (Open Source: উন্মুক্ত সোর্স, মুক্ত সোর্স) মানে হচ্ছে, সোর্সকে উন্মুক্ত করে ছেড়ে দেয়া। কথাটির বিপরীত শব্দ হচ্ছে “সংরক্ষিত সোর্স” (Closed Source)।

ওপেন সোর্স মানে ফ্রি না

কিংবা

উন্মুক্ত সোর্স মানে মাগনা না

কথাটা শুনেছি, বুঝেও ফেলেছি…

কিন্তু সত্যি বলতে কি, বুঝে ফেলার ভান করলেও, কিংবা বুঝে ফেললেও আসলে কিন্তু কিচ্ছুই বুঝতে পারিনি – এটা বুঝতে পারলাম, যখন এবিষয়ে কথা বাড়াতে গিয়ে এখানে-ওখানে ধাক্কা খাচ্ছিলাম।

  • উইন্ডোজ একটা সফ্‌টওয়্যার, যা কিনে নিতে হয়, এটা ওপেন সোর্স না। বাংলাদেশের বিজয় কীবোর্ড কিন্তু এরকমই একটা সফ্‌টওয়্যার, যা সংরক্ষিত সোর্স এবং কিনে ব্যবহার করতে হয়।
  • উবুন্ত‌ু একটা সফ্‌টওয়্যার, যা ফ্রি পাওয়া যায়, মানে মাগনা, আবার এটা ওপেন সোর্স। বাংলাদেশের অভ্র ফোনেটিক কীবোর্ড কিন্তু এরকমই একটা সফ্‌টওয়্যার, যা উন্মুক্ত সোর্স এবং বিনামূল্যও।

হিসাবটা এখানে মিলে না, তাই শিখাও হয় না।

অবশেষে লজ্জার মাথা খেয়ে যখন প্রশ্নটা শাবাব ভাইকে (Shabab Mustafa) এক সাক্ষাতে করেই ফেললাম, তখনই আসলে সত্যিকার অর্থে শিখলাম। যা শিখলাম, সেটাকে ভেঙে বলি:

উইন্ডোজ কিনে নিলেন, এটা এখন আপনার নিজের। করলেন কি, সেখানে কিছু পরিবর্তন করতে চাইলেন। এবার কোডগুলো খুলে দেখলেন, সব বাইনারি… কাকের ঠ্যাং-বকের ঠ্যাং। অর্থাৎ যা কোড ওরা করেছে, সবই এনক্রিপ্ট (encrypt) করে গুপ্ত ফাইলগুলো পাঠিয়েছে আপনাকে। অর্থাৎ এটা সংরক্ষিত সোর্স (Closed Source)।

কিন্তু উবুন্ত‌ু নিয়ে এসে কিছু বদলে নিতে চাইলে, নিশ্চিন্তে ফাইলগুলো খুলুন। আপনার মনের মতো পরিবর্তন করে নিন, কারণ যা কোড করা হয়েছে, সবই জলজ্যান্ত আপনার সামনে রয়েছে। অর্থাৎ এটা ওপেন সোর্স – সোর্সগুলো কম্পাইল করে বাইনারি করে ফেলা হয়নি।

তাহলে ওপেন সোর্সের ধারণাটা পরিষ্কার এখন।  ☺️

এখন যদি কেউ আপনার সামনে “cost of open source software” নিয়ে আলোচনা করেন, আপনি তাতে মোটেই আশ্চর্য হবেন না।

Meditate - GNU Open Source License Mascot - nanodesigns

Meditate – GNU Open Source License Mascot

এখন হিসাবটা মিলাই…

আপনি একটা সফ্‌টওয়্যার বানালেন, কোড সব ওপেন সোর্স, তার মানে, যখনই আপনি বিক্রী করবেন, যার কাছেই করবেন, তিনি সব কোড দেখতে পারবেন। আচ্ছা, তারমানে, ওপেন সোর্স প্রোগ্রাম বিক্রীও করা যায়! যেমন: ওয়ার্ডপ্রেসের জনপ্রিয় অনেক প্রিমিয়াম থিম, প্লাগইন আছে, যেগুলো ব্যবহার করতে হলে কিনে নিতে হয়। যখন কিনে নেয়া হয়, তখন কিন্তু তারা কোনো বাইনারি ফাইল পাঠায় না, তারা যে যে ফাইলে কোড করেছে, সেইসব ফাইল দিয়ে তৈরি প্যাকেজটাই আপনাকে পাঠায়। উদাহরণস্বরূপ WooCommerce একটি ওপেনসোর্স প্লাগইন, যার একটা ফ্রি সংস্করণ আছে, আবার একটা প্রিমিয়াম সংস্করণ আছে, প্রিমিয়াম সংস্করণটি কিনে নিতে হয়। এবং কিনে নেয়া সংস্করণটার সব কোড পড়া যায়, এবং লাইসেন্সের আওতায় থেকে ইচ্ছেমতো বদলেও নেয়া যায়।

আবার ঠিক তেমনি সংরক্ষিত সোর্সের প্রোগ্রামও বিনামূল্যে ছেড়ে দেয়া যায়। আপনি একটি সফ্‌টওয়্যার বানালেন, যা সাধারণ মানুষের খুব উপকারে আসবে, কিন্তু আপনি চান এর যাবতীয় কোড, খুঁটিনাটি আর কেউ না দেখুক, না জানুক – কোনো পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে ডাকুক, কিন্তু সবাই-ই এটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিক, কিংবা এ-ওর থেকে ডিভিডিতে কিংবা পেনড্রাইভে করে নিয়ে নিয়ে যাক, ইচ্ছেমতো ব্যবহার করুক, এই উপযোগিতা পাক – আপনি তখন এর সোর্স সংরক্ষিত রেখে তা বাজারজাত করলেন।

আবার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজটা ওপেন সোর্স হলেও, তা দিয়ে তৈরি সফ্‌টওয়্যারও অনেকসময় সংরক্ষিত সোর্সে ছাড়তে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে মূল ল্যাংগুয়েজে সেটা সম্ভব না হলেও, যথাযথ লাইসেন্স দিয়ে সেটাকে নিরাপত্তা দেয়া হয়।* অর্থাৎ কেউ সোর্স কোনোভাবে বের করে ফেললেও, তা বদলানোর অধিকার পাবে না – মর্মে একটা লাইসেন্স করতে হবে, তখন তার ব্যতয় হলে আদালতে লড়ালড়ি করে আপনি তা প্রতিহত করতে পারবেন।

উন্মুক্ত সোর্সের একটা বড় সমস্যা মনে হতে পারে যে, এটা তো মসিবতের জিনিস, আমার কাজ নিয়ে আরেকজন তার নামে চালিয়ে দিলো… হয়তো আমার মনেই সেটা কাজ করছে বলেই আমি আরেকজনকে সন্দেহ করছি 😜। …অসুন্দর হলেও অবশ্য বাস্তবে এমনটা হতে দেখা যায় কদাচিৎ। অসাধু মানুষ, ভালো জিনিসটাকে নিয়ে মন্দ করবে, তাই বলে ভালোটা তো আর থেমে থাকবে না। আসলে খুব বেশি গায়ে না লাগলে কেউ তাতে গরজ দেখায় না। কারণ যারা কাজ জানে, তারা চুরি করে না, আর যারা কাজ জানে না, তারাই অন্যেরটা মেরে দেয়ার দুষ্টু চিন্তা করে। আর তাই অন্যেরটা মেরে দিলেও তারা তা যথাযথভাবে প্রকৃত ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতে পারে না কিংবা তার কোনো সমস্যাও সমাধান করতে পারে না। ফলে, তারা শেষ পর্যন্ত ধরা খায়। …কিন্তু মনে রাখবেন, যদি যথাযথ লাইসেন্সে আপনার উন্মুক্ত সোর্স প্রোগ্রামের লাইসেন্স করে নিয়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু… গায়ে যখন লাগবে, তখন বিপৎগামীদের শ্রীঘরের ভাতও খাইয়ে নেয়া যাবে।

ওপেন সোর্স কিংবা সংরক্ষিত সোর্স – কোনটা আপনি বেছে নিবেন, কেন নিবেন, সে বিষয়ে জানানোর জন্য লেখাটি নয়। শুধুমাত্র, এই বিশ্বাসটুকু দেয়ার জন্য লেখা যে, আমার মতো আর ভুল করবেন না, বুঝেশুনে বিশ্বাস করুন:

ওপেন সোর্স মানে ফ্রি নয়

-মঈনুল ইসলাম
ফ্রন্ট এন্ড ডিযাইনার ও ওয়ার্ডপ্রেস ডেভলপার

_________________

উৎস নির্দেশ

আপনার মন্তব্য জানান...