২০২০ সালের জন্য যে সব সিনেমা
এর আগেও বছরের শুরুতে সম্ভাব্য আলোচিত ছবির তালিকা প্রকাশ করেছিল বাংলা মুভি ডেটাবেজ (বিএমডিবি)। দুঃখজনক হলো- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রগুলো মুক্তি পায়নি। এতে উঠে এসেছে নির্মাতার পরিকল্পনার অভাব। আবার তালিকার যে সব ছবি মুক্তি পেয়েছে তার বেশির ভাগই নিম্নমানের। এর সবচেয়ে বাজে উদাহরণ ২০১৯ সাল। বাণিজ্যিক বা আর্ট হাউস মিলে কোনো ব্লগারই পাঁচটি সেরা ছবির তালিকা দিতে পারেননি বিএমডিবি ব্লগে!
যার প্রভাব পড়েছে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে। বাণিজ্যের অভাব বন্ধ হয়েছে আরও প্রেক্ষাগৃহ। মাল্টিপ্লেক্স বাড়লেও তুলনামূলকভাবে দেশি সিনেমা মুক্তি পায়নি। বা মাল্টিপ্লেক্স উপযোগী বাংলা ছবি আসেনি।
এবারও সম্ভাব্য আলোচিত ২০২০ সালের সিনেমার তালিকা তুলে ধরা হলো। দেখা যাক ঢালিউডের অবস্থা কতটা পরিবর্তিত হয়।
তবে হ্যাঁ, সব ছবিই যে মুক্তি পাবে বা গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা তালিকা থেকে বাদ পড়েনি এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। মুক্তি প্রতিক্ষীত এ সকল সিনেমার মধ্যে আপনি কোন সিনেমাটি দেখতে আগ্রহী তা জানান ভোটের মাধ্যমে, এই পোস্টের শেষে।
২০২০ সালের সিনেমা
মিশন এক্সট্রিম : গত বছরের দেওয়া তালিকায়ও ছিল ফয়সাল আহমেদ ও সানী সানোয়ারের সিনেমাটি। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি। তবে বছরের শেষ দিকে ফার্স্টলুক প্রকাশের মাধ্যমে জানানো হয় মুক্তি পাবে ঈদুল ফিতরে। এই ছবির প্রতি দর্শক রয়েছে বেশ। গত বছরের বিএমডিবি’র জরিপে প্রথম অবস্থানে ছিল ‘মিশন এক্সট্রিম’। অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, তাসকিন রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, সাদিয়া, মনোজ প্রমাণিক, সৈয়দ নাজমুস সাকিবসহ অনেকেই।
আরেকটি বিষয় হলো- এই ছবির দুটি কিস্তি একই সঙ্গে চিত্রায়িত হয়েছে। তবে সিক্যুয়েল কবে মুক্তি পাবে জানা যায়নি।
নীল মুকুট : কামার আহমাদ সাইমনের প্রথম ফিকশন। যদিও ফিকশন-ডকুমেন্টারির দ্বৈরথের খোলাসা করতে রাজি নন তিনি। একাধিক অনুদান পাওয়া অন্যদিন ও শিকলবাহা নিয়ে কয়েকবছর ধরে এগোচ্ছিলেন এই নির্মাতা। এর মাঝে ‘নীল মুকুট’-এর ঘোষণা দিলেন একদম শুটিং শেষে। ছবিটি এই বছরে মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন। বিস্তারিত আসছে শিগগিরই।
পরান : রায়হান রাফি ২০১৮ সালে পরপর দুটি আলোচিত ছবি উপহার দেন। প্রমাণ করেছেন বাণিজ্যিক ছবিতে তার দক্ষতা। ২০১৯ সালে কোনো সিনেমা মুক্তি না পেলেও এবারের ভালোবাসা দিবসে আসছে ‘পরান’। অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম, শরীফুল রাজ ও ইয়াশ রোহান। ছবিটির প্রতি দর্শকের আগ্রহ বেশ। দেখার বিষয় শুরুর ক্রেজ কতটা ধরে রাখতে পারেন রাফি। এ ছাড়া শুটিং শেষ করেছেন ইত্তেফাক (সিয়াম আহমেদ ও মিম), ঘোষণা দিয়েছেন স্বপ্নবাজির (মাহিয়া মাহি, জান্নাতুল পিয়া ও সিয়াম)।
অপারেশন সুন্দরবন : পরপর বেশ কয়েকটি ছবির ঘোষণা দিয়েও শুটিং ফ্লোরে যেতে পারেননি ‘ঢাকা অ্যাটাক’-খ্যাত দীপংকর দীপন। মাঝে ঢাকা ২০৪০ (বাপ্পী চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও নুসরাত ফারিয়া) নামের সিনেমা শুরু করলেও আপাতত আপডেট নেই। বর্তমানে সুন্দরবনের জলদস্যুবিরোধী অপারেশন নিয়ে নির্মাণ করছেন ‘অপারেশন সুন্দরবন’। অভিনয় করছেন সিয়াম, রিয়াজ, রোশান, তাসকিন, নুসরাত ফারিয়াসহ অনেকে। মুক্তি পাবে ঈদুল আজহায়।বাণিজ্যিক দিক থেকে ছবিটি আলোচনায় রয়েছে।
পাপ পুণ্য : ক্ল্যাসিক ‘মনপুরা’র এক দশক পর ‘স্বপ্নজাল’ নিয়ে হাজির হলেও ততটা সাড়া পাননি গিয়াস উদ্দিন সেলিম। তার পরের ছবি ‘পাপ পুণ্য’। সিয়াম আহমেদ ও শাহনাজ সুমি জুটির পাশাপাশি আছেন চঞ্চল চৌধুরী ও আফসানা মিমির মতো তারকারা। চাঁদপুরে টানা কাজ করে যথাসময়ে সিনেমাটি শেষও করেছেন সেলিম। তবে টেনশন এতটুকুই যে, প্রযোজনা সংস্থা ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। দর্শকের পাতে সিনেমা তুলে দেওয়া নিয়ে তাদের দুর্নাম রয়েছে যথেষ্ট। ভালোবাসা দিবসে মুক্তির কথা শোনা গিয়েছিল। বাকিটা এখন অপেক্ষা!
মেড ইন বাংলাদেশ : রুবাইয়াত হোসেনের তৃতীয় সিনেমা। ২০১৯ সালের শেষদিকে ইউরোপের ষাটটির বেশি পর্দায় মুক্তি পেয়ে তোলপাড় তোলে। এছাড়া ঝুলিতে আছে দারুণ কিছু পুরস্কার ও অর্জন। রিকিতা নন্দিনী, মোস্তফা মনোয়ার ও নভেরা রহমান আছেন মূল ভূমিকায়। পয়লা বৈশাখে মুক্তির কথা রয়েছে। তবে এখনো সেন্সরের জন্য জমা পড়েনি ছবিটি। নির্মাতা জানিয়েছেন, পোশাক শ্রমিকদের কাছে সহজলভ্য করতে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেও ছবিটি মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে। কিছুদিন আগে জানিয়েছেন সিক্যুয়েলের পরিকল্পনাও।
রিকশা গার্ল : ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘আয়নাবাজি’ হতে পারতো বাংলা ছবির নতুন ট্রেন্ডসেটার। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। মিতালি পারকিনসের লেখা একই নামের উপন্যাস থেকে নির্মাণ করেছেন ‘রিকশা গার্ল’। চিত্রনাট্য করেছেন শর্বরী জোহরা আহমেদ। নাম ভূমিকায় আছেন নভেরা রহমান। সঙ্গে চম্পা, মোমেনা চৌধুরী, নরেশ ভূঁইয়া, অ্যালেন শুভ্রসহ আরও অনেকে।ক্যামিও করেছেন সিয়াম আহমেদ। মার্চে মুক্তির কথা রয়েছে ইংরেজিতে চিত্রায়িত এই সিনেমার।
হাওয়া : টেলিভিশনে স্মরণীয় কিছু ফিকশন উপহার দিয়েছেন মেজবাউর রহমান সুমন। অনেক দিন ধরে প্রস্তুতি নেন প্রথম সিনেমার। ‘হাওয়া’র দৃশ্যায়ন হয় সেন্ট মার্টিনের দ্বীপের কাছাকাছি সমুদ্রে। বেশ ঝুঁকিপূর্ণ শুটিংয়ে পরিচালক পেয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী, শরীফুল রাজ, নাজিফা তুষিসহ অনেককেই। বর্তমানে সম্পাদনার টেবিলে আছে সিনেমাটি। যতদূর শোনা যায়, বছরের শেষ দিকে মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। বছরের অন্যতম অর্জন হতে পারে এই সিনেমা।
নোনা জলের কাব্য : সরকারি অনুদান ও বিদেশি তহবিলে এই সিনেমা নির্মাণ করেছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার। তবে এখনো গোপনীয়তায় রয়েছে বিস্তারিত। বিশাল সেট ফেলে দৃশ্যায়ন হয়েছে কুয়াকাটায়। ধারণা করা হচ্ছে, দেশের আগে বিদেশের উৎসবে প্রথম যাবে ‘নোনাজলের কাব্য’। দেখা যাক, চলতি বছর মুক্তি পায় কিনা!
নো ল্যান্ডস ম্যান : মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবি ছাড়া তালিকা অসম্পূর্ণ। তবে নির্মাতার ড্রিম প্রজেক্টটি কবে মুক্তি পাবে জানা যায়নি। বলিউডের নাওয়াজউদ্দীন সিদ্দিকী ও ঢাকা তাহসানসহ দেশ-বিদেশের শিল্পীদের নিয়ে একাধিক দেশের প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’। নিউইয়র্ক, সিডনি ও মুম্বাইয়ে হয়েছে মূল অংশের দৃশ্যায়ন। এ ছাড়া আলোচনায় থাকলেও ফারুকীর শনিবার বিকেল (জাহিদ হাসান ও নুসরাত ইমরোজ তিশা) অদৌ সেন্সরের চৌকাঠ পার হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এটিও যৌথ প্রযোজনার। ঢাকা থেকে লগ্নি করেছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার পলাতক কর্ণধার আব্দুল আজিজ। তবে বিদেশের উৎসবে নিয়মিত প্রদর্শিত হচ্ছে।
ঊনপঞ্চাশ বাতাস : নাট্য নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের প্রথম চলচ্চিত্র। অভিনয়ে শার্লিন ফারজানা ও ইমতিয়াজ বর্ষণ। শোনা গিয়েছিল ২০১৯ সালে মুক্তি পাবে। ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণা ভিডিও ও পোস্টার প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু শেষতক চলতি বছরে এসেছে ঠেকেছে। সম্প্রতি নির্মাতা জানিয়েছেন, সেন্সর শেষে মুক্তির তারিখ ঘোষণা করবেন। প্রচারণাও করবেন জোর লাগিয়ে। তবে ছবিটির গল্প সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি।
পেয়ারার সুবাস: বছর তিনেক আগে শুরু হয়েছিল নুরুল আলম আতিকের সিনেমাটির। শোনা যাচ্ছে, চলতি বছর আসতে পারে প্রেক্ষাগৃহে। ছবির অভিনেত্রী জয়া আহসান একবার বলেছিলেন, ‘… তবে আমি ছবিটি নিয়ে বলতে পারি, এটা একটা দুর্ধর্ষ ছবি। আতিক যে বিষয়টি নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেছে, এ ধরনের বিষয় সাধারণত কেউ স্পর্শ করে না। কেউ সাহস দেখায় না। সেই হিসেবে আতিক এমন একটা বিষয় নিয়ে ছবি নির্মাণের সাহস দেখিয়েছে।’ আরও অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, আহমেদ রুবেলসহ অনেকেই। এ ছাড়া মুক্তি পেতে পারে আতিকের অ্যান্থলজি সিনেমা মানুষের বাগান।
গণ্ডি: এর আগে সরকারি অনুদানে ‘ভুবন মাঝি’ নির্মাণ করেন ফাখরুল আরেফীন খান। ততটা সাড়া পায়নি। দ্বিতীয় ছবি ‘গণ্ডি’র এখনো পর্যন্ত আকর্ষণ সুবর্ণা মুস্তাফা ও কলকাতার সব্যসাচী চক্রবর্তীর নতুন জুটি। আরও আছেন মাজনুন মিজান, অপর্ণা ঘোষসহ অনেকে। সেন্সর সনদও মিলেছে। মুক্তিও নিশ্চিত। ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে একটি গান।
পদ্মপুরান : নদীর পারের মানুষদের জীবন ও জীবিকাকে ঘিরে নির্মিত রাশিদ পলাশের ছবিটি। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদিয়া আফরিন মাহী। কিছুদিন আগে ছবির পোস্টার বেশ নজর কাড়ে। সেখানে দেখা যায়, একজন অসহায় চুল ছেঁটে দেওয়া গর্ভবতী নারী পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত। মাদক ব্যবসায়ীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন চম্পা। আর শম্পা রেজা তৃতীয় লিঙ্গের প্রধানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
বীর : বাণিজ্যিক সিনেমার সেরা নায়ক শাকিব খান ও সফল নির্মাতা কাজী হায়াতের ছবি ‘বীর’। হায়াতের ৫০তম নির্মাণও। বলা যায়, পুরোনো দিনের নির্মাতাদের উল্লেখযোগ্য সিনেমা বলতেই এটিই মুক্তি পাচ্ছে চলতি বছর। টার্গেট মার্চ। শাকিবের সঙ্গে আছেন শবনম বুবলী।
এর বাইরে শাকিবের দুটি ছবি লন্ডন লাভ (ইফতেখার চৌধুরী) ও কবি (হাসিবুর রেজা কল্লোল) আলোচনায় আসতে পারে। তবে শুটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘সুখবর’ই থাকলো। এর বাইরে গতানুগতিক ধারার কিছু ছবিতে দেখা যাবে নায়ককে।
অন্য ছবির মধ্যে রয়েছে তানভীর মোকাম্মেলের রূপসা নদীর বাঁকে (জাহিদ হাসান শোভন), নেয়ামুল ইমতিয়াজ নঈমের জ্যাম (আরিফিন শুভ ও পূর্ণিমা) ও গাঙচিল (পূর্ণিমা ও ফেরদৌস), এম এ রাহিমের শান (সিয়াম, তাসকিন ও পূজা), মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের আনন্দঅশ্রু (মাহি ও সাইমন), চয়নিকা চৌধুরীর বিশ্বসুন্দরী (সিয়াম ও পরী মনি), সৈকত নাসিরের ক্যাসিনো (নিরব ও শবনম বুবলি) ও আকবর (ইমন ও ববি), রবিন খানের মন দেব মন নেব (মাহি ও শিবলী নোমান), নাদের চৌধুরীর জ্বিন (সজল, রোশান, পূজা ও মুন), শামীম আহমেদের শাহেনশাহ (শাকিব ও নুসরাত) ও বিক্ষোভ (শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও শান্ত খান), হাবিবুর রহমানের অলাতচক্র (জয়া আহসান ও আহমেদ রুবেল), অঞ্জন আইচের আগামীকাল (ইমন ও জাকিয়া বারী মম), সাইফ চন্দনের ওস্তাদ (নিরব), ইশতিয়াক জিকোর সিটি অ্যান্ড ক্যাটস এবং যুবরাজ শামীমের আদিম।
উপরের তালিকার কোন সিনেমাটি আপনি দেখতে সবচেয়ে আগ্রহী?
অামাদের সুপারিশ