পাই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যখন বৃত্তের ব্যাস ১, এর পরিধি হয় পাইয়ের সমান।
সংখ্যার তালিকাঅমূলদ সংখ্যা
γζ(3)√2√3√5φαeπδ
   
সংখ্যা পদ্ধতি এর মান নির্ণয়
দ্বিমিক 11.00100100001111110110…[১]
দশমিক 3.14159265358979323846264338327950288…
ষোলমিক 3.243F6A8885A308D31319…[২]
মূলদ আসন্নমান 3, 227, 333106, 355113, 103993/33102, ...[৩]

(সঠিকতার উর্ধক্রমে)

সিঁড়িভাঙ্গা ভগ্নাংশ [3; 7, 15, 1, 292, 1, 1, 1, 2, 1, 3, 1, 14, 2, 1, 1, … ][৪]

(This continued fraction is not periodic. Shown in linear notation)

ত্রিকোণমিতি রেডিয়ান = ১৮০ ডিগ্রি

পাই (প্রতীক π, প্রাচীন গ্রিক ভাষায় পি) অথবা π একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধ্রুবক, মোটামুটিভাবে এর মান ৩.১৪১৫৯। ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে যেকোনও বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে এই ধ্রুবক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তবে একইভাবে এটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সঙ্গে এর ব্যাসার্ধের বর্গের অনুপাতের সমান। গণিত, বিজ্ঞানপ্রকৌশল বিদ্যার অনেক সূত্রে পাইয়ের দেখা পাওয়া যায়। পাই একটি অমূলদ সংখ্যা, অর্থাৎ এটিকে দুইটি পূর্ণসংখ্যার ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করা যায় না। অন্যভাবে বলা যায় এটিকে দশমিক আকারে সম্পূর্ণ প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তার মানে আবার এও নয় যে, এটিতে কিছু অঙ্ক পর্যাবৃত্ত বা পৌনঃপুনিক আকারে আসে। বরং দশমিকের পরের অঙ্কগুলো দৈবভাবেই পাওয়া যায়। পাই যে কেবল অমূলদ তা নয়, এটি একই সঙ্গে একটি তুরীয় সংখ্যা, অর্থাৎ এটিকে কোনও বহুপদী সমীকরণের মূল হিসাবেও গণনা করা যায় না। গণিতের ইতিহাস জুড়ে, নির্ভুলভাবে পাইয়ের মান নির্ণয়ের ব্যাপক চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি, এই ধরণের প্রচেষ্টা কখনও কখনও সংস্কৃতির অংশও হয়েছে। গ্রিক বর্ণ পাই (গ্রিকঃ π পি), গ্রিক পরিধি (περίμετρος পেরিমেত্রোস্‌) থেকে এসেছে। সম্ভবত ১৭০৬ সালে উইলিয়াম জোনস প্রথম এটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে লিওনার্দ অয়েলার এটিকে জনপ্রিয় করেন। পাইকে গণিতে ব্যবহারের সময় ইংরেজি পাই (pie) হিসেবে উচ্চারণ করা হয় যদিও এর গ্রিক উচ্চারণ পি। এটিকে কোনো কোনো সময় বৃত্তীয় ধ্রুবক, আর্কিমিডিসের ধ্রুবক অথবা রুডলফের সংখ্যাও (জার্মান গণিতবিদের নাম হতে এসেছে, যার পাইয়ের মান নিয়ে কাজ পৃথিবীখ্যাত) বলা হয়।

মৌলিক তথ্য[উৎস সম্পাদনা]

ছোট হাতের π দ্বারা এই ধ্রুবকটিকে প্রকাশ করা হয়।

বর্ণ π[উৎস সম্পাদনা]

যখন গ্রিক বর্ণ π পাওয়া যায় না, তখন পাই অথবা pi ব্যবহার করা হয়। এর ইংরেজি উচ্চারণ পাই হলেও গ্রিক উচ্চারণ কিছুটা ভিন্ন। আর এই ধ্রুবকের নাম π কারণ গ্রিক περιφέρειαয় (পেরিফেরেইয়া) এবং περίμετρος (পেরিমেত্রোস্‌) এর প্রথম বর্ণ এটি। [৫] এছাড়া এটি ইউনিকোড অক্ষর U+03C0 .[৬]

সংজ্ঞা[উৎস সম্পাদনা]

পরিধি = π × ব্যাস

ইউক্লিডিয় সমতলীয় জ্যামিতিতে, বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে π হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

[৫]

লক্ষনীয় যে, পরিধি বা ব্যাস বৃত্তের মাপের ওপর নির্ভর করে না। যদি একটি বৃত্তের ব্যাস অন্য একটি বৃত্তের ব্যাসের দ্বিগুন হয়, তাহলে সেই বৃত্তের পরিধি পরের বৃত্তের পরিধির দ্বিগুন হবে। অর্থাৎ (পরিধি/ব্যাস) একই থাকবে। এই ঘটনাটি সমস্ত বৃত্তের সদৃশতার এর একটি ফলাফল।

বৃত্তের ক্ষেত্রফল = π × দাগকাটা অংশের ক্ষেত্রফল

অন্যভাবে বৃত্তের ক্ষেত্রফল ও যে বর্গক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য বৃত্তের ব্যাসার্ধের সমান তার ক্ষেত্রফলের অনুপাত হিসাবেও প্রকাশ করা যায়। [৫][৭]

অমূলদত্ব ও তুরীয়ত্ব[উৎস সম্পাদনা]

ধ্রুবক π একটি অমূলদ সংখ্যা ; মানে এইটিকে দুইটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসেবে লেখা যাবে না। ১৭৬১ সালে জোহান হেনরিখ ল্যাম্বার্ট এটি প্রমাণ করেন [৫]। বিশ শতকে, এমন সা প্রমাণ বের করা হল যা বোঝার জন্য ক্যালকুলাস সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকলেই চলে। এর মধ্যে আইভান নিভেন-এর প্রমাণটি সর্বজনবিদিত [৮][৯]। এর আগের আর একটি প্রমাণ করেন মেরি কার্টরাইট [১০]

১৮৮২ সালে ফার্দিনান্ড ভন লিনডেম্যান প্রমাণ করেন যে পাই একটি তুরীয় সংখ্যা। এর মানে মূলদ সহগবিশিষ্ট এমন কোন বহুপদী সমীকরণ নেই, π যার মূল[১১] । তাহলে এর আর একটি বৈশিষ্ট্য দাড়ালো যে, কম্পাসরুলারের সাহায্যে পাই আছে এমন সমতুল কিছু আঁকা যাবে না। মানে হল কম্পাস ও রুলারের সাহায্যে একটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমান ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট একটি বর্গক্ষেত্র কখনো আঁকা যাবে না। [১২]

সাংখ্যিক মান[উৎস সম্পাদনা]

দশমিকের পর 110 ঘর পর্যন্ত পাই-এর মান নিচে দেওয়া হল। [১৩][১৪]
দশমিকের পর ট্রিলিয়নের (১ এর পর ১২টি শূন্য, 1012) বেশি ঘর পর্যন্ত পাই-এর মান বের করা হলেও সাধারণ কাজে দশমিকের পর ১২ ঘরের বেশি মান তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। সারা দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় বৃত্তের পরিধি গণনার জন্য ৩৯ ঘরের মান ব্যবহার করলে তার সূক্ষতা হবে হাইড্রোজেন পরমাণুর সমান। [১৫]

π নিজেই একটি অসীম দশমিক বর্ধন কারণ π একটি অমূলদ সংখ্যা, এর দশমিক বর্ধন কখনো শেষ হয় না বা পুনরাবৃত্তি করে না। এই অসীম ধারাটি গণিতজ্ঞ ও সাধরণ মানুষকে যুগে যুগে চমৎকৃত করেছে। তাই সবাই চেষ্টা করেছে এর সঠিক মান বের করার জন্য। কেবল যে বিশ্লেষণী কাজ হয়েছ তা নয়, এই কাজে এমনকী সুপার কম্পিউটারও ব্যবহার করা হয়েছে। সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে দশমিকের পর লক্ষ কোটি ঘর পর্যন্ত হিসাব করে কোন পুনরাবৃত্তি পাওয়া যায় নি। [১৬]

পাই গণনা[উৎস সম্পাদনা]

একটি বড় বৃত্ত একে তার ব্যাস ও পরিধি মেপে π-এর মান গণনা করা যায় । এছাড়া আর একটি পদ্ধতি রয়েছে যেখানে ও বৃত্ত আর বহুভূজ আঁকতে হয়। এটি আর্কিমিডিসের পদ্ধতি। একটি বৃত্তের মধ্যে সুষম বহুভূজ আঁকতে হবে। বাহুর সংখ্যা যতো বেশি হবে বহুভূজের ক্ষেত্রফল বৃত্তের ক্ষেত্রফলের ততো কাছাকাছি হবে। তারপর বৃত্তের ব্যাসার্ধের সঙ্গে এর ক্ষেত্রফলের সম্পর্ক থেকে π গণনা করা যাবে। [১৭] ক্ষেত্রফলের সাথে সম্পর্কটি হল বৃত্তের ক্ষেত্রফল A হল ব্যাসার্ধের বর্গ গুণ পাই।

বিশুদ্ধ গাণিতিক পদ্ধতিতেও π গণনা করা যায়। তবে π গণনার বেশিরভাগ সূত্র বোঝার জন্য ত্রিকোণমিতিক্যালকুলাস -এর ধারণা থাকা দরকার। আবার কোনো কোনোটি বেশ সহজ। যেমন গ্রেগরি-লিবনিৎজ ধারা। [১৮]

.

এই ধারাটি লিখতে এ গণনা করতে সহজ হলেও এই থেকে -এর মান কেন পাওয়া যাবে তা তাৎ‍ক্ষণিকভাবে বোধগম্য হওয়া কঠিন। এটি এতো ধীরে কেন্দ্রীভূত হয় যে, এর ৩০০টি পদ নিয়েও দশমিকের পর দুইঘর মান সঠিকভাবে পাওযা যায় না। [১৯]

ইতিহাস[উৎস সম্পাদনা]

πএর ইতিহাস আর গণিতের উন্নতিসাধনের সামগ্রিক ইতিহাস প্রায় সমান্তরাল। [২০]। বিভিন্ন লেখক পাই-এর ইতিহাসকে তিনভাগে ভাগ করেছেন – জ্যামিতি প্রয়োগের প্রাচীনকালের জ্যামিতি যুগ, সপ্তদশ শতকে ইউরোপে ক্যালকুলাস আবিস্কারের পর সনাতনি যুগ এবং কম্পিউটারের আবির্ভাবের পর কম্পিউটার যুগ। [২১]

জ্যামিতির যুগ[উৎস সম্পাদনা]

পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত যে সব বৃত্তের জন্য সমান ও ৩ এর চাইতে বড় - এই সত্য প্রাচীন মিশরীয়, ব্যাবিলনীয়, ভারতীয় ও গ্রিক জ্যামিতজ্ঞদের জানা ছিল। সবচেয়ে পুরনো গণনার কথা জনা যাচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০ সালে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাবিলনীয় (25/8) ও মিশরীয়দের (256/81) মান প্রকৃত মানের ১ শতাংশের মধ্যে।[৫] ভারতীয় পুস্তক শতপথ ব্রাহ্মণ (Shatapatha Brahmana)-এ π -এর মান ৩৩৯/১০৮≈ ৩..৩১৯ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সালে প্রকাশিত বুকস অব কিং-এ π -এর মান ৩ হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে। [২২][২৩] আর্কিমিডিস (খ্রিস্টপূর্ব ২৮৭‌২১২)) প্রথম rigorously পাই-এর মান গণনা করেন। তিনি প্রথমে পাই মানের সীমা বের করলেন। বৃত্তের ভিতরে সুষম বহুভূজের পরিসীমা বের করে তিনি এই কাজটি সমাধা করেন। [২৩]

Archimedes pi.svg

৯৬ বাহু বিশিষ্ট বহুভূজ একে তিনি দেখালেন 223/71 < π < 22/7 [২৩]। এই দুই-এর গড় নিয়ে পাই-এর একটি মান পাওয়া গেল ৩.১৪১৯. পরবর্তী শতকগুলোতে ভারত ও চীনে বেশ কাজ হয়েছ। মোটামুটি ৪৮০ সালে চীনা গণিতজ্ঞ জু চোঙ্গজি পাই‌ এর আসন্ন মান বের করলেন ৩৫৫/১১৩ এবং প্রমাণ করলেন 3.1415926 < π < 3.1415927 যা কিনা পরবর্তী ৯০০ বছর পর্যন্ত সবচেয়ে সঠিক হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।

সনাতনী যুগ[উৎস সম্পাদনা]

দ্বিতীয় সহস্রাব্দ শুরুর আগে পাই এর মান দশমিকের পর ১০ ঘর পর্যন্ত জানা ছিল। পাই গবেষণার পরবর্তী উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে ক্যালকুলাস, বিশেষ করে অসীম ধারা আবিস্কারের পর থেকে। অসীম ধারা থেকে বোঝা গেল বেশি বেশি পদ যোগ করে পাইর মান অধিকতর সূক্ষতায় বের করা যাবে। ১৪০০ সালের দিকে সংগমাগ্রামার মাধব প্রথম সেরকম ধারা খুঁজে পান।

এই ধারাটি এখন গ্রেগরি‌-লিবনিৎজ ধারা নামে পরিচিত কারণ সপ্তদশ শতকে এটি তাদের দ্বারা পুনঃ আবিস্কৃত হয়। দুঃখের বিষয় এর কেন্দ্রীভূততার হার খুবই ধীর। এমনকি আর্কিমিডিসের সমান সূক্ষতার জন্য প্রায় ৪০০০ পদের যোগফল নেওয়া দরকার হয়ে পড়ে। যাহোক সিরিজটিকে নিচের ধারায় রূপান্তরিত করে

মাধব π=3.14159265359, বের করেন যা ১১ ঘর পর্যন্ত সঠিক। ১৪২৪ সালে ইরানের জ্যোতির্বিদ জামশিদ আল-কাশি ১৬ ঘর পর্যন্ত π-এর মান বের করলে মাধবের রেকর্ড ভেঙ্গে যায়। জার্মান গণিতজ্ঞ লুডলফ ভন চিউলেন আর্কিমিডিসের পর প্রথম ইউরোপীয় হিসাবে পাই গণনায় শরীক হোন। তিনি জ্যামিতিক পদ্ধতিতে দশমিকের পর ৩২ ঘর পর্যন্ত সঠিকভাবে পাই গণনা করেন। এই গণনা করে তিনি এত বেশি আনন্দিত ও গর্বিত হোন যে, মৃত্যুর পর তার সমাধিতে সেটি উৎকীর্ণ করা হয়। এই সময়ে ইউরোপে ক্যালকুলাস, অসীম ধারার সমাধান ও জ্যামিতিক গুণন পদ্ধতির আবির্ভাব হয়। সেরকম প্রথম হলো ভিয়েতের সূত্র, যা তিনি ১৫৯৩ সালে আবিস্কার করেন।।

আর একটি বিখ্যাত ফল হলো ১৬৫৫ সালে জন ওয়ালির সূত্রবদ্ধ ওয়ালির গুনফল

আইজ্যাক নিউটনও π -এর জন্য ধারা লিখেছেন এবং ১৫ ঘর পর্যন্ত মান বের করেছেন।

জন মাচিন হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি কী না ১০০ ঘর পর্যন্ত পাই-এর মান বের করেন। তিনি

সূত্রের সঙ্গে নিচের সূত্রটিও ব্যবহার করেন।

এই ধরণের সূত্রকে এখন মাচিন তূল্য সূত্র বলা হয়। মাচিন-তুল্য সূত্র সমূহ কম্পিউটার আগমনের আগ পর্যন্ত পাই গণনায় সবচেয়ে সফল ছিল। সেরকম অনেক সূত্র তখন প্রচলিত ছিল। এমন একটি সূত্রের সাহায্যে ১৮৪৪ সালে জাকারিয়াস ডাসে মুখে মেখে ২০০ ঘর পর্যন্ত গণনা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ১৯ শতকে সবচেয়ে ভালো সাফল্য উইলিয়াম শাঙ্ক-এর. ১৫ বছরে তিনি দশমিকের পর ৭০৭ ঘর পর্যন্ত গণনা করেন। তবে পরে দেখা যায় সামান্য ভুলের জন্য ৫২৭ ঘর পর্যন্ত তার হিসাব সঠিক ছিল (এই ধরণের ভুল এড়ানোর জন্য এখন কমপক্ষে দুইভাবে গণনা করে দেখা হয় সঠিক আছে কী না)। আঠারো শতকে তত্বীয় আগ্রগতি থেকে জানা গেল কেবল গাণিতিক গণনা করে পাই এর মান বের করা যাবে না।১৭৬১ সালে জোহান হেনরিক ল্যাম্বার্ট আবিস্কার করলেন π একটি অমূলদ সংখ্যা। ১৭৯৪ সালে আর্দ্রে-মারি লেজেন্ড্রে আরো একধাপ অগ্রসর হয়ে দেখালেন π2 ও একটি অমূলদ সংখ্যা। ১৭৩৫ সালে বেসেলের সমস্যা সমাধান করে লিওনার্দ অয়েলার

এর প্রকৃত মান বের করেন যা কীনা π2/6। তিনি π ও মৌলিক সংখ্যার মধ্যে ভালো সম্পর্ক খুঁজে পান। অয়েলার ও লিজেঁদর দুইজনই ধারণা করেছিলেন যে π একটি সীমাতিক্রান্ত সংখ্যা হতে পারে। বস্তুত ১৮৮২ সালে ফার্দিনান্দ ভন লিন্ডারম্যান এটি প্রমাণ করেণ। উইলিয়াম জোনস তার এ নিউ ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথম্যাটিকস (A New Introduction to Mathematics) বইতে প্রথম এই ধ্রুবক প্রকাশে π প্রতীক ব্যবহার করেন। তবে এটি জনপ্রিয় হয় ১৭৩৭ সালে অয়েলার যখন এটি গ্রহণ করেন।

আধুনিক ডিজিটাল যুগ[উৎস সম্পাদনা]

বিশ শতকে কম্পিউটারের উদ্ভাবনের পর π গণনায় নতুন জোয়ার আসে। জন ভন নিউম্যান ১৯৪৯ সালে ২০৩৭ ঘর পর্যন্ত গণনা করেন। এনিয়াক কম্পিউটারে এই গণনার জন্য মাত্র ৭০ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। বিশ শতকের শুরুতে ভারতীয় গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজন π গণনার বেশ কটি নতুন সূত্র বের করেন। [২৪] তার একটি বিখ্যাত সিরিজ হল

যা কি না প্রতি পদে ১৪ ঘর করে মান বের করতে পারে। [২৪]

পাইয়ের মান মুখস্থ করা[উৎস সম্পাদনা]

সাম্প্রতিক সময়ে পাইয়ের মান মুখস্থ বলার রেকর্ড ক্রমেই উর্ধ্বগামী হচ্ছে।

কম্পিউটারে পাই গণনার বহু পূর্ব থেকেই পাইয়ের মান মুখস্থ করা কিছু কিছু মানুষের নেশার মতো ছিল। ২০০৬ সালে আকিরা হারাগুচি নামে এক অবসরপ্রাপ্ত জাপানি প্রকৌশলী দাবি করেন তিনি ১,০০,০০০ ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান বলতে পারেন।[২৫] অবশ্য এ দাবি এখনো গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃক পরীক্ষিত হয়নি। গিনেসের স্বীকৃত পাইয়ের মান বলার রেকর্ড হল ৬৭,৮৯০ ঘর, যার অধিকারী চীনের ২৪ বছর বয়স্ক স্নাতক ছাত্র লু চাও[২৬] তিনি ২৪ ঘণ্টা ৪ মিনিট সময় নিয়ে দশমিকের পর ৬৭,৮৯০ ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান শুদ্ধভাবে বলতে সক্ষম হন।[২৭]

পাইয়ের মান মনে রাখার বেশ কিছু কৌশল আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল পাই কবিতা (ইংরেজিতে: piem)। এই কবিতাগুলি এমন যে, এর প্রত্যেকটি শব্দের দৈর্ঘ্য (বর্ণে) পাইয়ের একেকটি অঙ্ক প্রকাশ করে।

গণিত ও বিজ্ঞানে ব্যবহার[উৎস সম্পাদনা]

গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে π ব্যবহৃত হয়। এমনকি বিশুদ্ধ ইউক্লিডীয় জ্যামিতির গণ্ডি পেরিয়ে পাই অন্য সব শাখাতে প্রবেশ করেছে।[২৮]

জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতি[উৎস সম্পাদনা]

r ব্যাসার্ধ্য এবং d=2r ব্যাসবিশিষ্ট এএটি বৃত্তের পরিধি হচ্ছে πd এবং তার ক্ষেত্রফল হল πr2। এছাড়া বৃত্তকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আরও বেশ কিছু আকৃতি ও গড়নের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয়ে পাই ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে উপবৃত্ত, গোলক, কোণ এবং টোরাস[২৯] একই সাথে পাই নির্দিষ্ট যোগজে পরিধি, ক্ষেত্রফল ও আয়তন প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। বৃত্তের বিভিন্ন সজ্জার মাধ্যমেই সৃষ্ট পরিধি, ক্ষেত্রফল ও আয়তনই এখানে বিবেচ্য। যেমন, একটি একক চাকতির ক্ষেত্রফলের সমীকরণটি হচ্ছে:[৩০]

এবং

সমীকরণটি দ্বারা একক বৃত্তের পরিধির অর্ধেক নির্ণয় করা যায়।[২৯] আরও জটিল সমীকরণ পাইয়ের সহায়তায় যোগজীকরণ করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে সলিড্‌ অফ রিভলিউশন এর প্রয়োজন পড়ে।[৩১]

ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের একক বৃত্ত সংজ্ঞা থেকে জানা যায়, সাইন এবং কোসাইন অপেক্ষকের পর্যায় হচ্ছে 2π। অর্থাৎ, সকল চলক x এবং সকল পূর্ণ সংখ্যা n এর জন্য sin(x) = sin(x + 2πn) এবং cos(x) = cos(x + 2πn)। কারণ, সকল পূর্ণ সংখ্যা n এর জন্য sin(0) = 0, sin(2πn) = 0। অন্যদিকে আবার, ১৮০° কোণ মানের দিক থেকে π রেডিয়ানের সমান। অন্য কথায় ১° = (π/১৮০) রেডিয়ান।

আধুনিক গণিতে, অনেক সময়ই ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক ব্যবহার করে পাইয়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, sin x = 0 সমীকরণটির কথা ধরা যাক। x-এর যে ক্ষুদ্রতম অশূন্য ধনাত্মক মানের জন্য এই সমীকরণটি সত্য হবে তাকে পাইয়ের সংজ্ঞা হিসেবে ধরা যায়। কারণ sin π = 0। এভাবে সংজ্ঞায়িত করে ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ও সমাকলনের অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা এড়ানো যায়। একইভাবে বিপরীত ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক ব্যবহার করেও এ ধরণের সংজ্ঞা দেয়া যায়। একটি উদাহরণ দেয়া যাক, π = 2 arccos(0) or π = 4 arctan(1)। পাইয়ের অসীম ধারা প্রতিপাদন করার জন্যও বিপরীত ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক ব্যবহার করা হয়। বিপরীত ত্রিককণমিতিক অপেক্ষক বর্ধিত করার মাধ্যমেই এই প্রতিপাদনটি করা সম্ভব।

উচ্চতর বিশ্লেষণ ও সংখ্যা তত্ত্ব[উৎস সম্পাদনা]

Euler's formula.svg

জটিল বিশ্লেষণে পাই ধ্রুবকটি অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পাই[উৎস সম্পাদনা]

একটি চমকপ্রদ "পাই প্লেট"।

সম্ভবত পাইয়ের সহজবোধ্য সংজ্ঞার কারণেই পাই এর ধারণা, বিশেষ করে এর দশমিক প্রকাশ যে কোন গাণিতিক ধারণার চেয়ে বহুগুণ বেশি জনপ্রিয়।[৩২] পাই গণিতবিদ ও সাধারণ মানুষ - সবার কাছেই দারুণ প্রিয়।[৩৩] পাইয়ের মান নির্ণয়ে অগ্রগতির খবর এবং এ নিয়ে লোকজনের উচ্ছ্বাস মিডিয়াতে হরদম খবর হয়।[৩৪]

পাই দিবস পালন করা হয় ১৪ই মার্চ, যা পাইয়ের মান ৩.১৪ থেকে এসেছে।[৩৫] পাইয়ের মান "৩.১৪১৫৯!" বলে এমআইটির ছাত্রছাত্রীরা আনন্দধ্বনি হিসাবে ব্যবহার করে।[৩৬] এছাড়া পাইয়ের চিহ্ন ও এর মান খোদাই করা "পাই প্লেট"ও স্মারক হিসাবে কিনতে পাওয়া যায়।[৩৭]

আরো দেখুন[উৎস সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[উৎস সম্পাদনা]

  1. Alexander D. Poularikas (১৯৯৯)। The handbook of formulas and tables for signal processing। CRC Press। পৃ: ৯.৮। আইএসবিএন 9780849385797 
  2. "Sample digits for hexa decimal digits of pi"। Dec. ৬, ২০০২। 
  3. "Collection of approximations for পাই" 
  4. টেমপ্লেট:OEIS2C: Continued fraction for Pi, On-Line Encyclopedia of Integer Sequences
  5. ৫.০ ৫.১ ৫.২ ৫.৩ ৫.৪ "About Pi"Ask Dr. Math FAQ। সংগৃহীত ২০০৭-১০-২৯ ]
  6. "Characters Ordered by Unicode"W3C। সংগৃহীত ২০০৭-১০-২৫ 
  7. Richmond, Bettina (১৯৯৯-০১-১২)। "Area of a Circle"Western Kentucky University। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  8. Niven, Ivan (১৯৪৭)। "A simple proof that π is irrational" (PDF)। Bulletin of the American Mathematical Society 53 (6): 509। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  9. Richter, Helmut (১৯৯৯-০৭-২৮)। "Pi Is Irrational"। Leibniz Rechenzentrum। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  10. Jeffreys, Harold (১৯৭৩)। Scientific Inference (3rd সংস্করণ)। Cambridge University Press 
  11. Mayer, Steve। "The Transcendence of π"। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  12. "Squaring the Circle"cut-the-knot। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  13. "A000796: Decimal expansion of Pi"On-Line Encyclopedia of Integer Sequences। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  14.   |name= প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য); |writter= প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য); |title= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  15. "Statistical estimation of pi using random vectors"। সংগৃহীত ২০০৭-০৮-১২ 
  16. Boutin, Chad (২০০৫-০৪-২৬)। "Pi seems a good random number generator - but not always the best"Purdue University। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  17. Groleau, Rick (০৯-২০০৩)। "Infinite Secrets: Approximating Pi"। NOVA। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  18. Eymard, Pierre; Jean-Pierre Lafon (02 ২০০৪)। "2.6"The Number π (English ভাষায়)। Stephen S. Wilson (translator)। American Mathematical Society। পৃ: 53। আইএসবিএন 0821832468। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪  |coauthors= প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য); |month= প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য)
  19. Lampret, Vito (২০০৬)। "Even from Gregory-Leibniz series π could be computed: an example of how convergence of series can be accelerated" (PDF)। Lecturas Mathematicas (English, Spanish ভাষায়) 27: 21–25। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  20. Beckmann, Petr (১৯৭৬)। A History of πSt. Martin's GriffinISBN 0-312-38185-9 
  21. "Archimedes' constant π"। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  22. Aleff, H. Peter। "Ancient Creation Stories told by the Numbers: Solomon's Pi"। recoveredscience.com। সংগৃহীত ২০০৭-১০-৩০ 
  23. ২৩.০ ২৩.১ ২৩.২ O'Connor, J J; E F Robertson (২০০১-০৮)। "A history of Pi"। সংগৃহীত ২০০৭-১০-৩০  |coauthors= প্যারামিটার অজানা, উপেক্ষা করুন (সাহায্য)
  24. ২৪.০ ২৪.১ "The constant π: Ramanujan type formulas"। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৪ 
  25. Otake, Tomoko (২০০৬-১২-১৭)। "How can anyone remember 100,000 numbers?"The Japan Times। সংগৃহীত ২০০৭-১০-২৭ 
  26. "Pi World Ranking List"। সংগৃহীত ২০০৭-১০-২৭ 
  27. "Chinese student breaks Guiness record by reciting 67,890 digits of pi"News Guangdong। ২০০৬-১১-২৮। সংগৃহীত ২০০৭-১০-২৭ 
  28. "Japanese breaks pi memory record"BBC News২০০৫-০৭-০২। সংগৃহীত ২০০৭-১০-৩০ 
  29. ২৯.০ ২৯.১ "Area and Circumference of a Circle by Archimedes"Penn State। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৮ 
  30. Weisstein, Eric W (২০০৬-০১-২৮)। "Unit Disk Integral"MathWorld। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৮ 
  31. Weisstein, Eric W (২০০৬-০৫-০৪)। "Solid of Revolution"MathWorld। সংগৃহীত ২০০৭-১১-০৮ 
  32. See, e.g, Lennart Berggren, Jonathan M. Borwein, and Peter B. Borwein (eds.), Pi: A Source Book. Springer, 1999 (2nd ed.). ISBN 978-0-387-98946-4.
  33. See Alfred S. Posamentier and Ingmar Lehmann, Pi: A Biography of the World's Most Mysterious Number. Prometheus Books, 2004. ISBN 978-1-59102-200-8.
  34. E.g., MSNBC, Man recites pi from memory to 83,431 places July 3, 2005; Matt Schudel, Obituaries: "John W. Wrench, Jr.: Mathematician Had a Taste for Pi" The Washington Post, March 25, 2009, p. B5.
  35. Pi Day activities.
  36. MIT, E to the U.
  37. Signals, The Pi Dish. Accessed 2009.01.27.

বহিসংযোগ[উৎস সম্পাদনা]