বাংলাদেশে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দলটির ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতালে এর পক্ষে বড় ধরণের কোন তৎপরতা ছিল না।
সারাদেশে সড়ক পথে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকা ছাড়া জনজীবনে হরতালের প্রভাব সেভাবে দেখা যায়নি।
জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, দলের নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ আটক থাকায় এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে জামায়াত এবং ছাত্রশিবির এমুহুর্তে ঝুঁকি নিচ্ছে না।
"আমরা যে একটা লিফলেট নিয়ে মানুষের কাছে যাব, সে সুযোগও দেয়া হচ্ছে না। শুধু টেলিভিশনে প্রেস ব্রিফিং দিয়ে তো আর হরতাল হবে না।"
আবু মো. সেলিম, রাজশাহীর জামায়ত নেতা
দেশের যে সব এলাকায় জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে, সে সব পকেট এলাকাতেও এবার হরতালে দলটির তেমন তৎপরতা ছিল না। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলার কথা উঠে আসে।
সাতক্ষীরা জামায়াতের একজন নেতা জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় কিছুদিন ধরে যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। সে কারণে জামায়াত এবং ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা এমুহুর্তে ঝুঁকি নিয়ে সেভাবে মাঠে নামেনি।
উত্তরের রাজশাহী অঞ্চলেও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন। যদিও রাজশাহীর খড়খড়ি এলাকায় মাছবাহী একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করাসহ বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
রাজশাহী থেকে জামায়াতের একজন নেতা আবু মো: সেলিম বলছিলেন, হরতাল ডাকলেই তা হয়ে যাবে, এমনটা নয়। এ কথাটাতো মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। আমরা যে একটা লিফলেট নিয়ে মানুষের কাছে যাব, সে সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। শুধু টেলিভিশনে প্রেস ব্রিফিং দিয়ে তো আর হরতাল হবে না।
তিনি আরও বলেছেন, জামায়াতে নেতাকর্মীদের হয়রানি এবং গ্রেফতার করে সরকার গণতান্ত্রিক সব অধিকার হরণ করছে।
উত্তরের অন্যান্য এলাকা থেকেও হরতালের সমর্থনে তেমন কোন তৎপরতার খবর পাওয়া যায়নি। গাইবান্ধার জামায়াতের একজন নেতা জানিয়েছেন, সকালে মহাসড়কে দু’একটি জায়গায় হরতালের সমর্থনে ব্যানার নিয়ে মিছিলের চেষ্টার ফটোসেশনের পর তাদের তেমন কোন তৎপরতা ছিল না। সেজন্য গাইবান্ধার ঐ নেতা হতাশাও প্রকাশ করেন।
তবে দিনাজপুরের জামায়াত নেতা মাহবুবুর রহমান ভুট্টোর বক্তব্য হচ্ছে, দেশে এখন উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। এর প্রভাবেও হরতাল শিথিল হয়েছে অনেক জায়গায়।
সারা দেশে সড়কপথে দুরপাল্লার যানবাহন বৃহস্পতিবার চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু দেশের অন্যান্য শহরের মতো ঢাকা নগরীর ভিতরে সবধরণের যানবাহন চলাচল করেছে।
ঢাকার দু’একটি জায়গায় ছাত্রশিবিরের কিছু নেতাকর্মী ঝটিকা মিছিল করেছে। এই হরতাল জামায়াত এককভাবে ডেকেছিল ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দলটির আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে।
জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, আটক এবং গুম হওয়ার আতংক তাদের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও কাজ করছে। এর প্রভাব পড়ছে দলীয় কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় আন্দোলন করেও কাঙ্খিত ফল আসেনি। সেই প্রেক্ষাপটে পূর্ণশক্তি নিয়ে জামায়াত মাঠে নামতে পারছে না।
বাংলা দৈনিক নয়াদিগন্ত'র নির্বাহী সম্পাদক সালাহউদ্দির বাবর বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতার মুখে পিকেটারদের অবস্থান দূর্বল ছিল। পরিবেশ, পরিস্থিতি যা বিরাজ করছে, তাতে একটা হতাশাও আছে। দীর্ঘ আন্দোলনের পর যে ফল এসেছে, সেটা তাদের অনুকুলে নয়। যে ভাবেই হোক আওয়ামী লীগ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন করে ফসল তাদের ঘরে নিয়েছে। এ কারণে হতাশা আছে। তারপর এত দীর্ঘ আন্দোলনের ক্ষতিওতো হয়েছে। ফলে মুহুর্তে জামায়াত স্বাভাবিক বা পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামতে পারছে না।
জামায়াতের নেতারা এটাও উল্লেখ করেছেন যে, পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্যও তারা এক জায়গায় জড়ো হতে পারছেন না। সেটাকেও দূর্বলতার একটা কারণ হিসেবে তারা দেখছেন।